ত্রিকোন- ভালোবাসা-সমাপ্ত

“শেষটা কি শুরু হবে?”

---

ইনায়া চুপচাপ বসে আছে বারান্দায়।
চায়ের কাপ ঠান্ডা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগেই।
তার চোখে এখন কান্না নেই, আছে ক্লান্তি—
ভাঙা বিশ্বাস নিয়ে বারবার দাঁড়িয়ে থাকার ক্লান্তি।

ইয়ারিশ সামনে এসে বসে।
তার চোখে লজ্জা, ঠোঁটে আর নেই সেই আত্মবিশ্বাস।
সে বলে,
“ইনায়া, আমি শুধু ভুল করিনি… আমি তোমার ভালোবাসার অপমান করেছি।
আমি যদি পারি, তোমার সব কান্নার হিসাব দিতে চাই… শুধু একটা সুযোগ দাও।”

ইনায়া তাকায় না।
সে শুধু বলে,
“তুমি জানো, ক্ষমা করে দেওয়া আর ভুলে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য কী?”

ইয়ারিশ চুপ।
ইনায়া বলে,
“আমি হয়তো ক্ষমা করতে পারব… কিন্তু ভুলতে পারব না।”

মেয়েটা তখন এসে বাবার কোল ধরে।
“আম্মু, আব্বুকে মাফ করে দাও না? আমি তো ওকে খুব মিস করি…”

ইনায়া চোখ বন্ধ করে।
এটাই কি মায়ের দুর্বলতা, নাকি শক্তি?
সে জানে, ভালোবাসা একবার ভাঙলে আগের মতো হয় না…
তবুও, কিছু সম্পর্ক শেষ করা যায় না—মেয়ের চোখের জন্য।

সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়,

আর বলে,
“তুমি এখানে থাকতে পারো…
কিন্তু নতুন করে বিশ্বাস গড়তে চাইলে, তোমাকে প্রতিদিন প্রমাণ দিতে হবে—
তুমি এখন সেই মানুষ,
যে হারিয়ে গিয়েছিল, আর ফিরে এসেছে শুধরে।”

ইয়ারিশ মাথা নিচু করে বলে,
“আমি প্রতিদিন তোমার ভালোবাসা ফেরত পাওয়ার জন্য লড়বো।
আমি চাই, একদিন তুমি আমায় আবার দেখে বলো—
‘তোমাকে দেখেই আবার ভালোবেসে ফেলেছি।’”

---

 -সমাপ্ত-

 

ত্রিকোন- ভালোবাসা-পর্ব-৬

 

“শেষ কিনারে আমি”

---

ইয়ারিশ এখন আগের মতো উজ্জ্বল নয়।
অফিসে প্রেজেন্টেশনে ভুল, ডেডলাইন মিস, বসের বিরক্ত মুখ—সব মিলিয়ে তার ক্যারিয়ার তলানিতে।
একদিন তার টেবিলে বস রেখে যায় চিঠি—
“আরেকটা ভুল হলে রিভিউতে নাম উঠবে...”

সাফা ঠিক তখনই আরও বেশি কাছে আসতে থাকে।
সে এখন শুধু সহকর্মী নয়—একটা ছায়ার মতো,
যে তার হতাশায় হাত রাখে, চোখে চোখ রাখে, বলে,
“তোমার জীবনে আমি ছায়া না, আলো হতে চাই ইয়ারিশ।”

ইয়ারিশ চুপ।
তার মনভূমিতে চলছে যুদ্ধ—
যেখানে একপাশে ইনায়ার চুপচাপ সহ্য, আর অন্যপাশে সাফার আগুন।

রাতে বাড়ি ফিরে মেয়ের ডায়েরি খুলে পড়ে—
“আজ আব্বু আবার আমাকে পড়ায়নি। আম্মু কাঁদছিলো।
আব্বু কি আমাকে আর ভালোবাসে না?”

লিখতে লিখতে পৃষ্ঠা ভিজে যায়।
ইয়ারিশ জানে—সে আজ শুধু একজন প্রেমিক নয়,
সে একজন স্বামী, একজন বাবা…
আর সেই ভূমিকা থেকে সে পালাতে পারেনা, চাইলেও না।

একদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইয়ারিশ নিজের চোখে দেখে
এক ক্লান্ত, দ্বিধাগ্রস্ত পুরুষ—যার মুখে প্রশ্ন,
“তুমি কি শুধু ভোগ করতে ভালোবাসো, নাকি সত্যি ভালোবাসতে জানো?”

সে ফোনটা হাতে নেয়।
সাফাকে লিখে—
"তুমি দয়া হতে পারো, কিন্তু মুক্তি না। আমাকে ক্ষমা করো, আমি আর আসতে পারব না।"

তারপর ধীরে ধীরে ফিরে যায় ইনায়ার দিকে…
কিন্তু ইনায়া কি তাকে গ্রহণ করবে?
না কি খুব দেরি হয়ে গেছে?

---

 পর্ব ৭: আসছে............

ত্রিকোন- ভালোবাসা-পর্ব-৫

“মাঝখানে আমি”

---

ইয়ারিশ এখন ধরা পড়ে গেছে সময়ের ফাঁদে।
তার বাস্তবতায় ইয়ানা—যে রান্নায় লবণ কম হলে মুখে হাসি রেখে বলে, "তবুও ভালোবাসি",
আর তার কল্পনায় সাফা—যে চোখের তাকায় বোঝায়, “তুমি আমাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ”।

এক রাতে, ইয়ানা হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখে ইয়ারিশ তাকে জড়িয়ে ধরেছে।
তার চোখ বন্ধ, কিন্তু ঠোঁটে সাফর নাম।
ইয়ানা বুকের ভেতর ঝড় চেপে রেখে বলে না কিছু, শুধু নিঃশব্দে সরে যায় পাশে থেকে।

ইয়ারিশ বুঝতে পারে না—কাকে ভালোবাসে সে?
যার সঙ্গে দিন গড়ে তোলা, না যার সঙ্গে রাতের কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া?

যখন সাফার কাছে যায়, তার হাসি আর কনফিডেন্সে মুগ্ধ হয়ে পড়ে সে।
কিন্তু কথা বলতে বলতে হঠাৎ মনে পড়ে,
"ইয়ানা এখন বাসায় হয়তো অপেক্ষা করছে রাতের খাবার নিয়ে।"

সাফার চোখে আকর্ষণ,
ইয়ানার চোখে অপেক্ষা।

ইয়ারিশ কাউকেই ছাড়তে পারে না,
আবার কাউকেই পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে না।
সে এক দোলাচলে ঘুরছে,
যেখানে কোনো জিত নেই—শুধু হার।

একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইয়ারিশ নিজের চোখে নিজেকে দেখে।
হঠাৎ বুঝতে পারে,
"আমি শুধু দুজন নারীকে কষ্ট দিচ্ছি না—আমি নিজেকেও প্রতিদিন ধ্বংস করছি।"

রাত ৩টায়, সে ইয়ানার পাশে বসে ফিসফিস করে বলে,
"আমি ভেঙে পড়েছি ইয়ানা... তুমি আমায় ধরবে তো?"
ইয়ানা চোখ মেলে দেখে,
এই মানুষটা আজও তার ভালোবাসা, কিন্তু ভরসা? হয়তো হারিয়ে গেছে...

 পর্ব ৬: আসছে............ 

ত্রিকোন- ভালোবাসা-পর্ব-৪

 

“তৃতীয় ছায়া”

---

সময় বদলেছে।
আরিশ এখন কর্পোরেট জগতে বেশ সফল।
মিটিং, বিজনেস ট্রিপ, অফিস পার্টি — এসবেই ব্যস্ত তার দিনরাত।
আর এই ব্যস্ত জীবনে আসলো এক নতুন নাম—সাফা।

একটি প্রজেক্টে আরিশের সঙ্গে কাজ করতে আসে সাফা।
চটপটে, বুদ্ধিমতী, আর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী।
আরিশ প্রথমদিকে মুগ্ধ হয় তার পেশাদারিত্বে,
কিন্তু ধীরে ধীরে মুগ্ধতা জায়গা করে নেয় মনোযোগে।

ইনায়া বুঝতে পারে, কিছু একটা বদলে গেছে।
আরিশ এখন ফোনে কম সময় দেয়, চোখে চোখ পড়লে এড়িয়ে যায়।
একদিন রাতে, ইনায়া জিজ্ঞেস করে,
“আমার দিকে না তাকিয়ে এতদিন কিভাবে ছিলে? আর এখন কেন কাঁপো?”

আরিশ চুপ।
তার মুখে কোনো মিথ্যা নেই, কিন্তু সত্যিটাও ভয়ংকর।

সাফা, যে জানত আরিশ বিবাহিত,
তবুও তার কোমল ব্যবহার, সময়মতো খোঁজ নেওয়া — এসব মিলিয়ে
একটা অনুভূতির দোলাচলে ফেলে দেয় আরিশকে।
এটা কি প্রেম? না কি একরকম আবেগের দুর্বলতা?

এক সন্ধ্যায়, ইনায়া আরিশের মেসেঞ্জারে দেখে সাফার নাম।
মনে পড়ে যায়,
“এই সেই লোক, যে একদিন বলেছিল, ‘তোমাকে ভালোবাসা আমার ইবাদত!’”

ইনায়া চুপচাপ দরজা খুলে ছাদে চলে যায়।
আকাশটা তখন মেঘলা।
তার চোখেও ঝরছে অভিমান।

আর তখনই পিছন থেকে আসে আরিশ।
ভাঙা গলায় বলে, “আমি আজ একটা ভুলের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি…
কিন্তু আমি জানি, আমার বাড়ি... তুমি।”

ইনায়া ফিরে তাকায়।
চোখে তখন অভিমান নয়,
একটা প্রশ্ন — “তুমি কি সত্যিই ফিরে আসবে? নাকি এটা শুধু অপরাধবোধ?”

---

 পর্ব ৫: আসছে............

ত্রিকোন- ভালোবাসা-পর্ব-৩

 

‘“ভালোবাসা এখন অভ্যাস নয়, ইবাদত”

---

পাঁচটা বছর!
বিয়ের সেই রাতের ভিজে চুড়ির টুংটাং শব্দ এখন ভেসে আসে আরিশার গলায় —
“মা, তুমি বাবাকে এত ভালোবাসো কেন?”

ইনায়া হেসে বলে, “কারণ সে শুধু স্বামী না, সে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।”
আরিশ পাশে বসে বলে, “আর সে আমার পৃথিবী।”

এই পাঁচ বছরে কত ঝড় গেছে—
অফিসের প্রমোশন না পাওয়া নিয়ে আরিশের হতাশা,
ইনায়ার শরীর খারাপ থাকা সত্ত্বেও মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া,
মাঝেমধ্যে ছোট ছোট মনোমালিন্য…

কিন্তু দিনের শেষে তারা একসাথে বসে
এক কাপ চা আর দুইটা চুমু দিয়ে ভুলে গেছে সব ঝামেলা।

ইনায়া এখন আর শুধু প্রেমিকা না,
সে এক দায়িত্ববান মা, একজন সহযোদ্ধা।
আর আরিশ? সে এখনো রাতে ইনায়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“তোমাকে আবার নতুন করে ভালোবেসে ফেললাম আজ!”

একদিন আরিশ রাতে অফিস থেকে ফিরতে দেরি করে।
ইনায়া দরজা খুলে কিছু না বলে জড়িয়ে ধরে—
“বুঝতে পারো? আমি আজও তোমার অপেক্ষায় থাকি, ঠিক আগের মতো…”

আর আরিশ বলে,
“তোমাকে ভালোবাসা এখন আর অভ্যাস নয়, এটা আমার ইবাদত।”

ছোট্ট আরিশা জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে মা–বাবা আলিঙ্গন করছে।
সে দৌড়ে এসে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে।
তিনজনের হাসি মিলেমিশে একটা ভালোবাসার পৃথিবী তৈরি করে।

এটাই ছিল তাদের ভালোবাসার পঞ্চম বছরের গল্প।
একটা সংসার, যেখানে ভালোবাসা শুধু টিকে নেই—বরং বেঁচে আছে, প্রতিদিন।

---

 পর্ব ৪: আসছে............

ত্রিকোন- ভালোবাসা-পর্ব-২

“তোমাকে দেখেই ভালোবেসেছিলাম – দ্বিতীয় অধ্যায়”

---

দুই বছর কেটে গেছে তাদের বিয়ের।
আলমারিতে এখন পাশাপাশি ঝুলে থাকা দুটো অফিস আইডি কার্ড,
রান্নাঘরে একসাথে রান্না করার হাসিখুশি ব্যস্ততা,
রাতের খাবারে Netflix আর একসাথে একটা কাঁথা—এই ছিলো তাদের ছোট্ট রাজ্য।

কিন্তু একদিন সকালে ইনায়ার চোখে জল।
আরিশ ভয়ে ছুটে এল, “কি হয়েছে?”
ইনায়া হাতে একটা রিপোর্ট ধরিয়ে বলল, “আমরা মা-বাবা হতে চলেছি!”

আরিশ প্রথমে স্তব্ধ, তারপর হেসে উঠল…
জোরে জোরে চিৎকার করে বলল, “আমার পৃথিবীতে নতুন সূর্য উঠছে!”

গর্ভাবস্থার প্রতিটি মুহূর্তে ইনায়ার পাশে ছিল আরিশ—
রাত জেগে কাঁধে মাথা রেখে গল্প বলা,
সন্ধ্যায় প্রেগন্যান্সি ক্র্যাভিং মেটাতে আইসক্রিম খুঁজতে বের হওয়া,
আর প্রতিদিন গুনে গুনে বলা, “আর মাত্র ১২ দিন বাকি...”

অবশেষে সেই দিন এল।
একটি ছোট্ট মেয়ে এলো পৃথিবীতে, যার চোখ দুটো একেবারে ইনায়ার মতো।
নাম রাখা হল—আরিশা, ভালোবাসা আর আশার প্রতীক।

আরিশ রাতে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলে, “তুমি আমাদের ভালোবাসার গল্পের নতুন অধ্যায়।”
ইনায়া পাশে বসে বলে, “আমাদের গল্পটা সত্যিই স্বপ্নের মতো না?”

বছর পাঁচেক পর—ঘরে এখন একটাই শব্দ, “বাবা, মা, চল খেলি!”
আরিশ অফিস থেকে ফিরে দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে, ইনায়া রান্না করছে,
আর ছোট্ট আরিশা বলছে, “আজ বাবাকে আমি খাওয়াবো!”

তারা তিনজন—একটা ছোট্ট জগত, যেটা তৈরি হয়েছিল একটা ভালোবাসার হাসি থেকে।
আর ভালোবাসা এখন... শুধু অনুভবের নয়, অস্তিত্বের।

---

 পর্ব ৩: আসছে............

ত্রিকোন- ভালোবাসা-পর্ব-১

“তোমাকে দেখেই ভালোবেসেছিলাম”

---

বিয়ের মণ্ডপে বসে আছেন আরিশ। পাশের আসনে এখনো এসে পৌঁছায়নি কনে—ইনায়া।

হঠাৎ দরজায় আলো ঝলমলে শব্দ, আর তার মাঝেই ধীরে ধীরে এগিয়ে এল ইনায়া।

লাল শাড়িতে সে যেন এক স্বপ্ন, যার দিকে তাকিয়ে আরিশ নিজের নিঃশ্বাস আটকে রাখে।

ইনায়ার চোখে ছিল কিছুটা লজ্জা, কিছুটা ভয়… আর কিছুটা চেনা আকর্ষণ।

এটাই তো সেই ছেলেটি, যাকে ছয় মাস আগে ক্যাফেতে প্রথম দেখেছিলেন,

আর সেদিন থেকেই মনে মনে ভাবতেন—এই ছেলেটিই হবে আমার "চিরদিন"।

আরিশও ভুলে যেতে পারেনি সেই হাসিটা,

যেটা দিয়েছিল ইনায়া, প্রথম দেখা হওয়ার দিন।

আজ, এই বিয়ের দিনে, যখন দু’জনেই একই মণ্ডপে, একে অপরকে চুপচাপ দেখছে—

তাদের চোখে তখন হাজার গল্প, যেটা কেউ জানে না।

"তুমি ভয় পাচ্ছো?" — ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে আরিশ।

"ভয় নয়... আমি শুধু ভাবছি, তুমি আমাকে প্রতিদিন ভালোবাসবে তো?"

আরিশ হাত ধরে বলে, "তোমাকে দেখেই ভালোবেসেছিলাম,

এখন তো প্রতিদিন তোমার প্রেমে আবার পড়ার অপেক্ষায় আছি।"

সন্ধ্যায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে, তারা একসঙ্গে ছাদে দাঁড়িয়ে।

তারা কেউ কিছু বলছে না, শুধু চোখে চোখ।

তারপর হঠাৎ ইনায়া বলে,

"আজ থেকে আমি শুধু তোমার… আর তুমি শুধু আমার!"

আর তখনই ঝরতে শুরু করে হালকা বৃষ্টি,

ঠিক যেমন তাদের প্রেম—নরম, গভীর আর সত্যি।

পর্ব ২: আসছে............